আপনি কি জিপিএস এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? বর্তমান সময়ে এসে প্রযুক্তির নানান উন্নতির সাথে সাথে এই জিপিএস নামক প্রযুক্তির ব্যবহার প্রায় অধিকাংশ মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। তো আপনি যদি জিপিএস এর ব্যবহার সম্পর্কে না জেনে থাকে, তাহলে আমাদের আজকের ব্লগ পোষ্টটি অনেক উপকার হতে চলেছে।
কেননা আমরা আজকের এই সম্পন্ন আর্টিকেলজুড়ে জিপিএস এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পাশাপাশি জিপিএস কাকে বলে, জিপিএস এর বৈশিষ্ট্য সমূহ, জিপিএস কিভাবে কাজ করে এবং জিপিএস বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে সেই সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে। তাই অবহেলা না করে জিপিএস এর উল্লিখিত বিষয়াদি জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি শুরু থেকে একেবারে শেষ অবদি পড়তে থাকুন।
জিপিএস কাকে বলে
জিপিএস হচ্ছে সাধারনত একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক রেডিও নেভিগেশন প্রযুক্তি, যেটি ব্যবহার করে বিভিন্ন মোবাইল ডিভাইস অথবা নেভিগেশন যন্ত্রের সহায়তায় যেকোন স্থানের অবস্থান নির্ধারণ করা যায়। এটি আসলে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক একটি নেভিগেশন ব্যবস্থা, যা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের সঠিক অবস্থান খুব সহজে নিমিষেই চিহ্নিত করতে পারে।
জিপিএস এর ব্যবহার
আমরা অনেকেই জিপিএস এর নাম শুনেছি এর কাজ কি হয়তোবা সেটাও জানি কিন্তু এর ব্যবহার সম্পর্কে আমরা হয়তো জানি না। তো আপনি যদি জিপিএস এর ব্যবহার জেনে না থাকেন, তাহলে এই অংশটুকু মনযোগ সহকাড়ে পড়ে বিস্তারিত জেনে নিন।
১) নেভিগেশন ও ম্যাপিং
জিপিএস প্রচলিতভাবে সবচেয়ে বেশি পরিমানে যেটা ব্যবহার করা হয় তা হলো নেভিগেশন। এই সিস্টেম এর কাজ হল যেকোনো ব্যক্তি, ডিভাইস কিংবা যানবাহনের বর্তমান অবস্থান খুব নিখুতভাবে জানতে পাররে। এবং এর পাশাপাশি নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর একটি ধারাবাহিক পথ নির্দেশ দিয়ে থাকে যেমন:
ড্রাইভাররা ম্যাপের মাধ্যমে সঠিক রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারে।
যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ, ট্রেনাসহ আরও অন্যান্য যানবাহন চলচলের দিক নির্ধারণ করে।
২) স্মার্টফোন এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন
এখন প্রতিটা স্মার্টফোনেই জিপিএস রয়েছে যার সাহায্যে ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। যেমনফুড ডেলিভারি (Food Delivery) এবং রাইড শেয়ারিং (Ride Sharing) অ্যাপ এর সাহায্যে আপনার গ্রাহকের অবস্থান খুব সহজেই নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।
৩) যানবাহন ও ফ্লিট ট্র্যাকিং
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা রয়েছে যারা GPS ব্যবহার করে তাদের পরিবহন ব্যবস্থার উপর নজর দাড়ি রাখতে পারে।
৪) জরুরি সেবা এবং উদ্ধার অভিযান
জিপিএস প্রযুক্তি জরুরি সেবা এবং উদ্ধার অভিযান করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় যেমন অ্যাম্বুলেন্সে, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা তারা অনেক তাড়াতাড়ি সঠিক অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
৫) প্রতিরক্ষা এবং সামরিক খাতে ব্যবহার
প্রতিরক্ষা ও সামরিক খাতে জিপিএস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরন হিসেবে বলা যায় মিসাইল গাইডেন্স (Missile guidance) এবং সামরিক বাহিনীর এক ধরণের ট্র্যাকিং হিসেবে কাজ করে।
৬) পর্যটন শিল্পে জিপিএস ব্যবহার
পর্যটন শিল্পে জিপিএস ব্যবহারের মাধ্যমে সঠিকভাবে পর্যটকদের রুট নির্দেশনা ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের তথ্য দেওয়া হয়।
৭) ট্র্যাকিং ডিভাইসের ব্যবহার
এছাড়া আপনি চাইলে নিজের ট্র্যাকিং ডিভাইসের মাধ্যমে আপনার সন্তানদের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারবেন এর পাশাপাশি বয়স্কদের নজরদারিসহ আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তির নিরাপত্তা খুব সহজেই জিপিএস ব্যবহার করে করতে পারবেন।
জিপিএস এর বৈশিষ্ট্য
- ১) অবস্থান নির্ণয়- জিপিএস ব্যবহার করে খুব সহজেই পৃথিবীর যে কোনো স্থানের অবস্থান জানা যায়।
- ২) দিক নির্ণয়- জিপিএস ব্যবহার করে জাহাজ, স্টিমার ও নৌকার নাবিকরা খুব নিখুতভাবে দিক নির্নয় করতে পারেন।
- ৩) ট্রেনের গতিবেগ নির্ণয়- যেকোনো স্থান থেকে ট্রেনের গতিবিধি সম্পর্কে জানার জন্য GPS ব্যবহার করা হয়। Future Point
- ৪) মানচিত্র তৈরি- বেশ কয়েকতি দেশে বিভিন্ন প্রকার মানচিত্র তৈরি করার সময় এই জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।
- ৫) উচ্চতা নির্ণয়- যেকোন জায়গার উচ্চতা পরিমাপ GPS এর সাহায্যে খুব নিখুতভাবে নির্ণয় করা যায়।
- ৬) মিসাইল ও রকেটের দিক নির্ণয়- জিপিএস মিসাইল ও রকেটের দিক নির্ণয় করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
- ৭) আবহাওয়ার পূর্বাভাস- GPS ব্যবস্থার মাধ্যমে ঊর্ধ্ব বায়ুমন্ডলের আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া যায়।
জিপিএস কিভাবে কাজ করে
GPS মূলত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে। পৃথিবীর চারপাশে মোট ২৪টি GPS স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি স্যাটেলাইট পৃথিবীর প্রায় ১২,০০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করে। প্রতিটি স্যাটেলাইটে একটি নির্দিষ্ট সময় এবং স্থান সম্পর্কিত তথ্য থাকে।
📌আরো পড়ুন 👇
GPS ডিভাইসগুলো এই স্যাটেলাইটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তিনটি বা চারটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট স্থানের ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয় করে। তবে শুধু এটুকু কথাতে জিপিএস কিভাবে কাজ করে তা সম্পূর্ণ ভাবে বোঝা সম্ভব নয়। তাই একদম বিস্তারিত ভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করছি।
প্রথমত, জিপিএস সিস্টেমে রয়েছে স্পেস সেগমেন্টে যা স্যাটেলাইটগুলো ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীতে এক ধরণের রেডিও সংকেত পাঠায়। প্রতিটি স্যাটেলাইট সঠিক সময়ের তথ্য ও তার নিজস্ব অবস্থান প্রদান করে থাকে। আর এগুলো নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর প্রতিটি অংশকে কাভারেজ করে ফলে যেকোনো জায়গা হতে থেকে রিসিভার অন্তত ৪টি স্যাটেলাইটের সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারে।
তারপরে জিপিএস থেকে যেই রিসিভারটি স্যাটেলাইট এ পাঠানো হয় সেটি একটি সংকেতের মাধ্যমে এবং ট্রায়াংগুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে অবস্থান নির্ধারণ করে। এই প্রক্রিয়াটি মূলত তিন বা ততোধিক স্যাটেলাইটের এর ক্ষেত্রে দূরত্ব পরিমাপ করে থাকে।
এভাবেই জিপিএস কাজ করে অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে আরো একটি তথ্য দিয়ে রাখা ভালো যে, যখন মাত্র দুইটি স্যাটেলাইটের তথ্য ব্যবহার করে অবস্থান নির্ধারণ করা হয়, তখন এটিকে ২D পজিশনিং বলে। আর ৩D পজিশনিং তথনই বলা হবে যখন তিনটি বা তার বেশি স্যাটেলাইটের তথ্য নিয়ে অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
জিপিএস বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে
জিপিএস প্রত্যেকের জীবনে নানান জরুরি কাজে অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে, যেমন: ন্যাভিগেশন, ট্র্যাকিং, যোগাযোগ, সামরিক এবং বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ইত্যাদি। তবে আপনার মনে একটা প্রশ্ন জাগতেই পারে যে যদি কখনও এই জিপিএস সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তখন কি হবে? বা আমাদের কি কি ক্ষতি হতে পারে? আসুন,, তাহলে এই অংশ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
১। যোগাযোগ এবং ন্যাভিগেশনে বিশৃঙ্খলা
জিপিএস বন্ধ হলে যোগাযোগ এবং ন্যাভিগেশন এর উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে। অনেক ধরনের ন্যাভিগেশন ডিভাইস এবং অ্যাপ্লিকেশন, যেমন: গুগল ম্যাপস, উবার থেকে শুরু করে ফ্লাইট ট্র্যাকিং সিস্টেমও এই জিপিএসের নির্ভর করে থাকে। যার ফলে, এ সমস্ত যানবাহনের সঠিক অবস্থান ও পথ নির্ধারণ করা অনেক জটিল হয়ে পড়বে।
২। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বাধা
জিপিএস সিস্টেম বিজ্ঞানীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। উদাহরণস্বরূপ, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, এবং মহাকাশ গবেষণায় সঠিক স্থান এবং সময় নির্ধারণে জিপিএসের ওপর নির্ভর করা হয়। তাই, জিপিএস বন্ধ হয়ে গেলে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটবে।
৩। পরিবহন ব্যবস্থাপনার উপর
বিভিন্ন পরিবহন সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য জিপিএস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুতরাং কোন কারণে যদি এই প্রযুক্তি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিমানবন্দর ও জাহাজসহ আরও অন্যান্য পরিবহন চলাচল করাটা তুলনামূলক অনেক কঠিক হয়ে পড়বে।
জিপিএস সম্পর্কে শেষ মতামত
পরিশেষে বলা যায় জিপিএস সিস্টেম বিশ্বব্যাপী সঠিক নেভিগেশন এবং অবস্থান নির্ধারণের সুবিধা প্রদান করে, তবে এটি সিগন্যাল ব্লকিং, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং গোপনীয়তার উদ্বেগের মতো অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে। আজকের আর্টিকেলটি দ্বারা আমরা জানতে পারলাম জিপিএস এর ব্যবহার, জিপিএস কাকে বলে, জিপিএস কিভাবে কাজ করে এবং কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহৃত হয়।
তো আশা করছি আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ে জিপিএস সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে সক্ষম হয়েছেন। আপনি যদি এ ধরণের ইন্টারেস্টিং তথ্য বা শিক্ষনীয় তথ্য নিয়মিত পেতে চান, তাহলে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।